বগুড়া মহাস্থানগড় (Bogura Mahasthangarh) পুণ্ড্রনগরের বিখ্যাত দীর্ঘ প্রাচীর সহিত শহরে অনেকগুলি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান অবস্থিত – পরশুরাম প্যালেস, জিয়াত কুণ্ড, গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, শীলা দেবীর ঘাট, মহাস্থান মাজার, মুনির ঘোন এবং মানকালীর কুণ্ডু।
এছাড়াও, এখানে অনেকগুলি নদীও প্রবাহিত হয়, যেমন পূর্ব এবং উত্তরে বহমান করতোয়া নদী। এবং পশ্চিমে কালিদহ সাগরও অবস্থিত আছে, যা একটি প্রস্তুত জলাশয়। এই অঞ্চলে পশ্চিম-দক্ষিণে পর্যাপ্ত সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায় বারনসি খালের মাধ্যমে।
বগুড়া মহাস্থানগড়ের পরিচিতি
বগুড়া মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তির পর্যটন কেন্দ্র যেটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী । পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। মহাস্থানগড়ের বিস্তীর্ণ ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধণভূক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগরের সুদীর্ঘ প্রায় আড়াই হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের এক নীরবস্বাক্ষী।
এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত। এটি ছিল মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের সময়ে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।
এছাড়া মুসলিম শাসনামলেও এর গুরুত্ব ছিল। কিন্তু এখন সেসবের ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র। তবু সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে মহাস্থানগড়। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত।
বগুড়া মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান
বগুড়া মহাস্থানগড়ে অনেকগুলি ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন পরশুরাম প্যালেস, জীবন্ত কূপ বা জিয়ৎ কুণ্ড, গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর কুণ্ডু, মুনির ঘোন, শিলা দেবীর ঘাট এবং মহাস্থান মাজার।
এছাড়াও, নগরীর বাইরে, প্রায় পাঁচ বর্গমাইল অঞ্চলে বেহুলার বাসর ঘর, গোকুল মেড়, ভীমের জাঙ্গল, ভাসুবিহার, বিহার ধাপ এবং অনেকগুলি ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে।
শাহ সুলতান বলখীর মাজার বগুড়া মহাস্থানগড়ে

বগুড়া মহাস্থানগড়ের আগেই অবস্থিত রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখী মহীসওয়ারের মাজার। প্রচুর মাধ্যমে প্রসারিত হয়ে থাকে যে, এই এলাকার জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে এসেছিলেন তিনি।
তার জন্য অত্যন্ত দুর্বল বলখ প্রদেশ থেকে এখানে এসেছিলেন, মাছের পিঠে চড়ে আসতেন। ১২০৫-১২২০ খ্রিস্টাব্দে, এই অঞ্চলে তার সাথে পরশুরামের মধ্যে একটি মহাকাব্য হোক। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বগুড়া মহাস্থানগড়


বগুড়া মহাস্থানগড় জাদুঘরটি, যা ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন সমৃদ্ধ এক প্রাচীন স্থান। এই জাদুঘরে সংরক্ষিত করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো। জাদুঘরটি সারা সপ্তাহে প্রতিদিন খোলা থাকে, কিন্তু রোববারে পূর্ণ দিবস, সোমবারে অর্ধ দিবস, এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
বগুড়া মহাস্থানগড় গোবিন্দ ভিটা

গোবিন্দ ভিটা, যা বগুড়া মহাস্থানগড় জাদুঘরের সামনে করতোয়া নদীর কিনারায় অবস্থিত, এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ ‘করতোয়া মহাত্ম’তে এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে।
১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে, এখানে প্রাচীন যুগের নানান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু হয়েছে।
বগুড়া মহাস্থানগড় জিয়ৎ কুণ্ড

বগুড়া মহাস্থানগড়ের রাজা পরশুরামের প্রাসাদের সামনে বড় কূপের নাম জিয়ৎ কুণ্ড৷ কথিত আছে, এই কূপের পানি পান করে রাজা পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত ৷ তাই এই কুপটিকে নাকি বলা হত অলৌকিক কূপ।
পরশুরামের প্রাসাদ

জিয়ৎ কুণ্ডর পাশেই একটি প্রাসাদের অস্তিত্ব খোঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা, যা হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্রাসাদ হিসেবে পরিগনিত হতে পারে, যেটি ঐতিহাসিকভাবে মনে করে সবাই মনে হয়।
বেহুলার বাসরঘর

বেহুলার বাসরঘর এর আরেক নাম গোকুল মেধ৷ মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত৷ ইট দিয়ে নির্মিত এ স্তূপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণা বিশিষ্ট৷ খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে৷
শীলাদেবীর ঘাট

গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে শীলাদেবীর ঘাট। শীলাদেবী ছিলেন পরসুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের জন্য একটি মেলা বসত।
বগুড়া মহাস্থানগড় কিভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়া সহজ, বাস বা ট্রেন ব্যবহার করে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস বা লালমনি এক্সপ্রেস দিয়েও বগুড়া পৌঁছানো যায়। বগুড়ার হাড্ডিপট্টি বা রেলস্টেশন হতে খুব সহজে বাস অথবা অটোরিকশা নিয়ে ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে মহাস্থানগড় পৌঁছানো সম্ভব। প্রতি বছর এই স্থানে বেড়াতে আসে অসংখ্য পর্যটক ।
বগুড়া মহাস্থানগড় কোথায় কিভাবে থাকবেন
মহাস্থানগড়ে আছে কিছু আবাসিক হোটেল, কিন্তু তাদের মান খুব একটা ভালো নয়। একবার বগুড়া শহরে এসে দেখতে পারেন, যেখানে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি যদি ভালো মানের হোটেলে থাকতে ইচ্ছুক হন, তাহলে আকবরিয়া, সেঞ্চুরী মোটেল, সিস্তা হোটেল, সেফওয়ে মোটেল ভালো বিকল্প হতে পারে।
তাছাড়া যদি আভিজাত্য ও মনমুগ্ধ কর পরিবেশে থাকতে চান তাহলে ফাইভ স্টার মানের হোটেল মোম ইন এবং ফর স্টার মানের নাজ গার্ডেন হোটেল রয়েছে।

একটু কম দামে হোটেলে থাকতে ইচ্ছুক হলে, রয়েল প্যালেস, সান ভিউ, রাজমনি হোটেল, আর আজিজ হোটেল হলেও অনেক সুযোগ পাবেন। এই সব হোটেল বগুড়া থানা মোড় থেকে সাতমাথা পর্যন্ত মাত্র ৫ মিনিটে হাটলেই দেখতে পাবেন, একে অপরকে পেছনে ছেড়ে না।
বগুড়া মহাস্থানগড়ের শেষ কথা
এক হাজার বাই দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার বগুড়া মহাস্থানগড়ে ৫ বছর কেন, শত বছর খনন করেও সব প্রত্নসম্পদের হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ, কাহালু ও আদমদিঘী উপজেলায় যে সম্পদ রয়েছে তা শত বা হাজার বছর খনন করলেও শেষ করা যাবে না।
কারণ, একসময় মহাস্থান বা পুন্ড্রবর্ধনই ছিল এ দেশের রাজধানী। এর আয়তনও ছিল বেশ বড়। তবে এখানে এলে বিখ্যাত কটকটি খেতে ভুল করবেন না।

আমার প্রফাইলে স্বাগতম, আমি আরিফুল ইসলাম, StudyTech-এর CEO এবং Founder। আমি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, SEO, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ এবং ফ্রিল্যান্সিং করছি প্রায় ১০ বছর ধরে এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত ব্লগ লেখার চেষ্টা করি নিজের নলেজ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে, যাতে সবাই উপকৃত হয়।
আমি ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি আমার নিজস্ব মার্কেটিং এজেন্সির মাধ্যমে আইটি রিলেটেড সাপোর্ট দিয়ে থাকি, যেমনঃ ওয়েবসাইট বানানো, ওয়েবসাইতের জন্য এসইও করা, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ভিডিও এডস তরি, গুগল এবং ফেসবুক এডস বুস্ট সার্ভিস দিয়ে থাকি। এবং আমি একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারও পরিচালনা করি, যেখানে নতুনদের ডিজিটাল স্কিল এবং ফ্রিল্যান্সিং শেখাই।
আমার সাথে কানেক্ট হতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়াতে:
🔗 ওয়েবসাইট: arifulislam.com.bd
🔗 লিংকডইন: linkedin.com/in/arifinfo
🔗 ফেসবুক: facebook.com/ariful.info