বগুড়া শেরপুর উপজেলা পরিচিতি

বগুড়া শেরপুর উপজেলা

শেরপুর বগুড়া জেলার অন্তর্গত একটি অন্যতম উপজেলা, যা রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। প্রথম দিকে শেরপুর থানা হিসেবে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে একটি উপজেলা হিসেবে রূপান্তর করা হয়। শেরপুর শহরের নামকরণ করা হয় মূলত উপজেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রের নাম অনুযায়ী। 

বগুড়া জেলায় অবস্থিত শেরপুর উপজেলা একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চল। যার ঐতিহাসিক নামটি কেবল বগুড়া জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এ নামটির পরিচিতি খুঁজে পাওয়া যায় কাশ্মীর, ভারতের বীরভূম, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ এবং সিলেট জেলাতেও। কথিত আছে যার নাম অনুসারে শেরপুর নামটি উদ্ভব হয় তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের এক মহান বালক “ফরিদ খান”। 

জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, শেরপুর, বগুড়া
জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, শেরপুর, বগুড়া

শোনা যায় এই মহান বালকটি কোন এক সময় এক বিশালাকার হিংস্রবাঘ হত্যা করে “শের খান” নামে অভিহিত হন। তারই নামানুসারে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানের নামকরণ করা হয় যার মধ্যে বগুড়া জেলার শেরপুর অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শেরপুর উপজেলার পূর্বে ধুনট উপজেলা, পশ্চিমে নাটোর উপজেলার জেলার সিংড়া ও নন্দীগ্রাম উপজেলা, উত্তরে শাহজাহানপুর উপজেলা এবং দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও তারাশ উপজেলা অবস্থিত।

শেরপুর নামটি বহু প্রাচীনতম একটি নাম, যা আজ থেকে প্রায় চারশত বছর পূর্বে ইতিহাসের পাতায় একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে জায়গা করে নেয়। 

শেরপুরের বিখ্যাত দই
শেরপুরের বিখ্যাত দই / Photo: Youtube

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহুল আলোচিত এবং পুরো দেশব্যাপী বিখ্যাত বগুড়ার দই এর উৎপত্তিস্থলও কিন্তু শেরপুর। ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রায় দেড়শ শত বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বিখ্যাত এই দই এর উৎপাদন শুরু হয়। শেরপুরের বিখ্যাত দই তৈরীর প্রবর্তক হলেন ঘোষ পাড়ার নীলকন্ঠ ঘোষ।

ইতিহাস

তথ্য সূত্রে জানা যায় কোনো এক সময় বঙ্গ ও আসাম  করতোয়া নদী দ্বারা পৃথক ছিল। এ থেকে অনুমান করা যায়, প্রাচীন বৌদ্ধ আমল থেকেই শেরপুরের পরিচয় ইতিহাসের পাতায় সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। শেরপুর উপজেলার আরও দুটি শ্রুত নাম রয়েছে যা সচরাচর লোকমুখে শোনা যায়  যেমন ‘‘সোণাপুর’’ ও ‘‘বার দুয়ারী’’। 

কথিত আছে যে খ্রীষ্টিয় সপ্তদশ শতাব্দীতে সেইসময় নাটোর রাজগণ জমিদারী গঠন  করেছিলেন এবং তারা বার দুয়ারী নামে একটি তহসীল কাছারী স্থাপন করেছিলেন। তাই এর আরেকটি নাম বারদুয়ারী শেরপুর। তবে সোণাপুর সম্পর্কে জনশ্রুতি ব্যতীত অন্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, সেইসময় একবার এ এলাকায় প্রচুর স্বর্ণ ও সম্পদ পাওয়া গিয়েছিল অথবা এ অঞ্চলটি এক সময় প্রাচ্যের স্বর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছিল। আর এ কারণেই একে সোনাপুর নামে আখ্যায়িত করা হয়। 

আবার কেউ কেউ ‘‘সোনাভান’’ পুঁথি কিতাবে উল্লেখিত সোণাপুরকে শেরপুরের আদিনাম হিসেবে ধারণা করে থাকেন। শেরপুর শহরটি মূলত ধ্বংসাবশেষের একটি অবশিষ্টাংশ। এক সময় শেরপুর শহর দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে যথাক্রমে বারো মাইল ও ছয় মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। 

মূল শহরের সব অংশ বর্তমানে সমতল ভূমিতে রুপান্তরিত হয়েছে। প্রাচীন মূল শহরটি মূলত কখন এবং কীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো সে সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত পাওয়া যায়নি। অনুমান করা হয় যে প্রাচীন টোলা, পাঠান টোলা, ধড় মোকাম ও মিঞা টোলা এগুলোকে একসময় শহরের নামকরা ও উল্লেখযোগ্য মহল্লা হিসেবে গণ্য করা হতো। এছাড়াও একই মহল্লায় মসজিদের আধিক্য দেখে অনুমান করা হয় যে সেইসময় এটি একটি মুসলিম জনবহুল এলাকা ছিলো। 

বগুড়ার জয়পুরহাট জেলা শহরে রূপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শেরপুর ছিল দ্বিতীয় মর্যাদাশীল একটি ঐতিহাসিক শহর যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এখনও অনুধাবন করা যায়। এই শহরটি এককালে দালান বা কোঠা বাড়ীর শহর বলে আখ্যায়িত এবং পরিচিত ছিলো। প্রাচীন জমিদার আমলে শেরপুরে বহু সংখক দ্বিতল, ত্রিতল প্রাসাদ তৈরী করা হয়েছিল।

 যা নির্মাণ এর জন্য অসংখ্য রাজমিস্ত্রিকে মহল্লাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হতো বলে শোনা যায়। আর এ কারণেই পরবর্তীতে মহল্লাটি মিস্ত্রি পাড়া নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, পরবর্তীকালে বঙ্গাব্দ ১২৯২ সালে সংঘটিত হওয়া এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে সেই প্রাসাদসমূহ স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারেনি। 

বরং, ভূমিকম্পের কারণে এই শহরের বিপুল অংশে ক্ষতি সাধন হয় এবং একটি জনপদের বহুসংখ্যক মানুষ দালানের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন। শুধুমাত্র শেরপর শহরেই প্রায় পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন লোকের প্রাণ হানি হয়। এছাড়াও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এখানে অবস্থিত শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দির সহ আরও অনেকগুলো প্রাচীন মন্দির। তবে সর্বনাশা এই ভূমিকম্পের পূর্বে শেরপুর শহর ছিলো ঐতিহাসিক এবং এক সুশোভিত জনপদে ভরপুর।

ঐতিহ্যবাহি স্থান ও স্থাপনা

খেরুয়া মসজিদ

শেরপুরে খেরুয়া মসজিদ খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। মসজিদের দেয়ালে স্থাপিত ফার্সি শিলালিপি থেকে জানা যায়, জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা নবাব মুরাদ খানের অনুদানে আব্দুস সামাদ ফকির ১৫৮২ খ্রিঃ ৯৮৯ হিজরীর ২৬ জিলকদ সোমবার এই মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

খেরুয়া মসজিদ
খেরুয়া মসজিদ, শেরপুর, বগুড়া / Photo: Wikimedia Commons

মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে, রয়েছে চওড়া দেয়াল। পাতলা ইটগুলো গাঁথা হয়েছে চুন ও সড়টি দিয়ে। মসজিদটি বাইরের দিক থেকে উত্তর–দক্ষিণে বেশ লম্বা যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫৭ ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ২৪ ফুট। এছাড়াও মসজিদটিতে চারটি মিনার, তিনটি গম্বুজ, পাঁচটি দরজা এবং চারটি তাক রয়েছে। ইট, চুন ও সড়কি ছাড়াও এই মসজিদটির নির্মান কাজে বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। 

৯০ দশকে প্রত্নতত্ত বিভাগ এই মসজিদটি নতুন করে সংস্কার করেছেন। বর্তমানে মসজিদটিতে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। ইতিমধ্যে দেশ বিদেশের বহু পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থাপত্য বিশারদরা এই মসজিদ পরিদর্শন করেছেন এবং এখনও করেন। 

বগুড়া শহর থেকে খেরুয়া মসজিদের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং শেরপুর উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। 

গাজী শাহ বন্দেগী (রহঃ) এর মাজার

হযরত শাহ বন্দেগী (রঃ) মূলত ছিলেন একজন ধর্মভীরু মানুষ যিনি ইসলাম প্রচারে কাজ করে গেছেন। তাঁর পুরো নাম হযরত সদরুদ্দিন বন্দেগী (রহঃ)। তিনি একবার অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়ার কারনে “গাজী শাহ বন্দেগী (রঃ)” হয়েছিলেন।

গাজী শাহ বন্দেগী (রহঃ) এর মাজার শেরপুর বগুড়া
গাজী শাহ বন্দেগী (রহঃ) এর মাজার শেরপুর বগুড়া / Photo: sherpur.bogra.gov.bd

ইতিহাসবীদদের বর্ননানুসারে, রাজা বলাল সেন বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হযরত শাহ্ তুর্কান শহীদ হওয়ার সংবাদ অবগত হওয়ার পর বাবা আদম শহীদ (রহঃ) শাহ্ বন্দেগী সহ আরো বেশ কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে শেরপুরে আসেন। শাহ্ তুর্কান (রহঃ) এর দাফনকার্য সম্পন্ন হওযাল পর পুনরায় বাবা আদম শহীদ বলাল সেন বাহীনির সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্ত তথ্য বিভ্রাটের কারণে রাজা বলাল সেন এবং তার বাহীনি আত্মহত্যা করেন।

ফলে একদম বিনা যুদ্ধে বাবা আদম শহীদ বাহীনি জয়লাভ করে। যুদ্ধে জয়লাভের পর বাবা আদম শহীদ সহ তার অন্যান্য সঙ্গীদের নিয়ে আদম দীঘি থানায় চলে যান। কিন্তু হযরত গাজী শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) শেরপুরের খন্দকার টোলা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তার এই সমাধি স্থানকে কেন্দ্র করে

বর্তমানে খন্দকারটোলায় হযরত শাহ্ বন্দেগী (রহঃ) কওমী মাদ্রাসা ও কমপ্লে­ক্স স্থাপিত হয়েছে। গাজী শাহ্ বন্দেগীর মাজার জিয়ারতেও প্রায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আসে শেরপুরে।

সাউদিয়া সিটি পার্ক বগুড়া
সাউদিয়া সিটি পার্ক বগুড়া, শেরপুর / Photo: Offroad Bangladesh

এছাড়াও শেরপুরে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান সমূহ যেমন হযরত শাহ তুর্কান (রহঃ) মাজার কে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদ্রাসা, শহীদদের গণকবর, মা ভবানী মন্দির অন্যতম। এগুলোর পাশাপাশি বর্তমান শেরপুর অন্যতম উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে জমিদার বাড়ি (০৯ নং সীমাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত), এবং সাউদিয়া সিটি পার্ক (১০নং শাহ-বন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত)

জনসংখ্যার উপাত্ত

বর্তমানে শেরপুর উপজেলার সর্বমোট আয়তন ২৯৫.৯৩ বর্গ কিমি। এছাড়াও জনসংখ্যার আয়তন প্রায় ৩৩২৮২৫ জন; তন্মধ্যে পুরুষ ১৬৫৫২৭ জন এবং, মহিলা ১৬৭২৯৮ জন। সর্বমোট জনসংখ্যার ৩০১৫১৯ জন মুসলিম রয়েছে, এছাড়াও হিন্দু রয়েছে ৩০৭২৬ জন, বাকি বৌদ্ধ ৯ জন, খ্রিস্টান ৮১ জন এবং অন্যান্য ৪৯০ জন। পাশাপাশি এ উপজেলায় কিছুসংখ্যক সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীরও বসবাস রয়েছে।

ভৌগলিক অবস্থান ও পরিচিতি

শেরপুর উপজেলার ভৌগলিক অবস্থান হলো:২৪°৩২´ থেকে ২৪°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২০´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর উত্তরে রয়েছে শাহজাহানপুর উপজেলা, দক্ষিণে রায়গঞ্জ ও তাড়াস উপজেলা, পূর্বে ধুনট উপজেলা, এবং পশ্চিমে সিংড়া ও নন্দীগ্রাম উপজেলা।

শেরপুর উপজেলায় অভ্যন্তরে প্রায় চারটি নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নদীর নামগুলো হলো:-

১। (ক) হলহলিয়া, (খ) বাঙ্গালী, ২। করতোয়া, ৩। ফুলজোড় ও ৪। ভাদাই (ভদ্রাবতী) ।

এছাড়াও এই উপজেলায় মাঝারি ও উন্নত ধরনের বেশ কতগুলো হোটেল ও রেস্তোরাও রয়েছে। পাশাপাশি হাট বাজারের বেশ সমাগমও এখানে লক্ষ্য করা যায়। হাট বাজারের নামসমূহ যেমন: মির্জাপুর, ফুলবাড়ী, রানীরহাট, ছোনকা, চৌমোহনী, বিশালপুর,  কল্যাণী, আলতাদিঘী, জোড়গাছা, ফুলজোড়, চমরপাথালিয়া, সীমাবাড়ী, জামাইল, ভবানীপুর, দোয়েলসারা, কয়েরখালী ইত্যাদি।

শেরপুর উপজেলার ইউনিয়নসমূহ

শেরপুর উপজেলায় সর্বমোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১০ টি। যথাক্রমে নিচে দেওয়া হোল:

ক্রমিকইউনিয়নের নামআয়তন
কুসুম্বী৯৮৪৮ একর
খানপুর৭২৮৯ একর
ভবানীপুর৯০৫৬ একর
সুঘাট৬০২৭ একর
মির্জাপুর৫৬৮১ একর
গাড়ীদহ৬১৪৮ একর
খামারকান্দি৫৪৬৯ একর
বিশালপুর১৩১৫২ একর
সীমাবাড়ী৫১২১ একর
১০শাহ-বন্দেগী৩৫১৮ একর

শিক্ষা

পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ
পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, শেরপুর, বগুড়া

শেরপুর উপজেলায় বর্তমানে শিক্ষার গড়হার প্রায় ৪৩.০%; তন্মধ্যে পুরুষ ৪৭.০%, এবং মহিলা ৩৯.১%। এই উপজেলায় বেশ কিছু ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে  শেরপুর কলেজ, শেরপুর ডায়মন্ড জুবিলী হাইস্কুল, ডি জে মডেল স্কুল, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ, এবং শহীদিয়া আলী মাদ্রাসা। উপজেলাটিতে বর্তমানে মোট কলেজের সংখ্যা সাতটি, টেকনিক্যাল কলেজের সংখ্যা ছয়টি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৯ ‍টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৯ টি, কেজি স্কুল ২০ টি, এবং মাদ্রাসার সংখ্যা সর্বমোট ১০৪ টি।

অর্থনীতি

অর্থনীতির দিক থেকে শেরপুর উপজেলা বগুড়ার তথা উত্তরবঙ্গের সবগুলো উপজেলা থেকে অনেক দূর এগিয়ে। কেননা এই উপজেলায় সরকারি এবং বেসরকারি সবমিলিয়ে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক এবং বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির সাথে সম্পৃক্ত আছে। এছাড়াও এই উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস হল কৃষি যা প্রায় ৬১.৩৩%। এই এলাকায় প্রধান উৎপাদিত ফল-ফলাদি কলা। এছাড়াও প্রধান কৃষি ফসল ধান, ভুট্টা, পাট, সরিষা, গম, আলু পেঁয়াজ, শাকসবজি, কালাই, পান ইত্যাদি। এছাড়াও প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ফসল ভুট্টা, গম, কলা, শাকসবজি, ও পান। 

ভাষা ও সংষ্কৃতি

শেরপুর উপজেলার ভৌগলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শেরপুরকে ঘিরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরারাজ্য, ঢাকা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য উপজেলা সমূহ। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই সাদৃশ্যপূর্ণ, তবুও সামান্য কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে করতোয়া, বাংঙ্গালী, ভদ্রাবতী প্রভৃতি উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার ঢাকা, চৌদ্দগ্রাম ও লাকসাম উপজেলার আঞ্চলিক ভাষা, এবং রাজশাহী এলাকার ভাষার অনেকটাই সাযুজ্য রয়েছে।

ইতিহাসপর্যালোচনায় দেখা যায় যে শেরপুর সভ্যতা বহুপ্রাচীন এবং বহুকাল ধরে চলে আসছে। এই উপজেলার প্রাপ্তপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে প্রকাশ পায়। এছাড়াও এখানে কিছুসংখ্যক ক্ষুদ্র জাতিসত্বা রয়েছে যাদেরনিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *