বগুড়া সদর উপজেলা

বগুড়া সদর

বগুড়া সদর, বাংলাদেশের বগুড়া জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১২৭৯ থেকে ১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলে শাসন করেছিলেন। এই অঞ্চলের নাম হয়েছে বগড়া বা বগুড়া, যা তার তার নামানুসারে ১৯৮৩ সালের ১ ডিসেম্বর বগুড়া সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়।

জেলায় শিক্ষার হার ৫৫.৫%। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০০টি। বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০ টি। মাদ্রাসা ২৮ টি (সরকারি-কামিল-১, ফাজিল-৩, আলিম-৪ দাখিল-২০ টি), সরকারি পলেটেকনিক ইনস্টিটউট ১ টি।

জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, ঐতিহ্যবাহী সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ, বগুড়া সরকারি কলেজ, ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইত্যাদি।

অবস্থানঃ

বগুড়া সদর উপজেলা একটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই উপজেলা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে বলে ধরা হয়ে থাকে। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ এবং ভৌগলিকভাবে অবস্থিত। । ৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী  উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত। বগুড়া সদর উপজেলার ক্ষেত্রফল প্রায় ১৭৭.৩৪ বর্গ কিলোমিটার। এখানে প্রায় ৪,৪৬,২৬৩ জন বাসিন্দা থাকেন।

এটি একটি অনেকটা গ্রামীণ এলাকা যেখানে ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা রয়েছে। এছাড়াও, ৪৬১টি গ্রাম সমন্বয়ে এ উপজেলাটি গঠিত হয়েছে। এই সদর উপজেলার অঞ্চলে প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক মূল্যের অধিকারী স্থান হিসেবে পরিচিত।

বগুড়া সদর উপজলার পটভুমিঃ 

১৬টি জেলার একমাত্র প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত বগুড়া সদর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিশ্বরোড নামক প্রশস্ত্ম সড়ক। এটি বাংলাদেশের একমাত্র ফাউন্ড্রি শিল্পখ্যাত উপজেলা। ফাউন্ড্রি শিল্পের পাশাপাশি এখানে বর্জ্য তুলা, ঝুট কাপড়, সাবান, বেডসীট মশারী কাপড়, জুট মিলস, পেপার মিলস, ফিড মিলস, সিমেন্ট কারখানা, পোল্ট্রিশিল্প সহ এগ্রো বেসড্ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে এবং এটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তান্তি বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

এ উপজেলায় মহাসড়কের দু’পাশে অবস্থান করছে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত বগুড়া সদর উপজেলার গ্রামগুলো। এটি খাদ্য শস্য ও শাকসবজি উৎপাদনের একটি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত।

এ জনপদের জনসাধারণের বহুদিনের আশা-আকাংখার প্রতিক শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শহীদ চাঁদু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ অন্যতম নারী সংগঠন পরবর্তীতে এনজিও হিসাবে পরিচিত ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ ( টিএমএসএস) এর সদর দপ্তর এ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত।

এছাড়া, গোকুল ইউনিয়নে মেধ নামক স্থানে ঐতিহাসিক বেহুলা – লক্ষিনদরের বাসর ঘর, চাঁদমুহা হরিপুর-সাহার বিল এলাকায় চাঁদ সওদাগরের বসতবাড়ি, নামুজা ইউনিয়নের চিংগাসপুরে পদ্মাদেবীর বাড়ি, লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের রায়-মাঝিড়ায় কালু গাজীর কোর্ট এবং নুনগোলা ইউনিয়নের হাজরাদিঘী এবতেদায়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন সাপের ওঝাঁ ধনমত্মরীর বাড়ি অবস্থিত। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সার্কিট হাউজ সংলগ্ন নবাববাড়ি যা বর্তমানে প্যালেস মিউজিয়াম ও কারুপলস্নী নামে বহুল পরিচিত।

ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ ও বগুড়ার উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি যা ১৮৫৪ সালে স্থাপিত হয়েছে। উডবার্ন পাবলিস লাইব্রেরি সংলগ্ন স্থানে বৃটেনের রাজ পরিবারের সদস্য এ্যাডওয়ার্ড সপ্তম জজ এর একটি প্রাচীন ভাস্কর রয়েছে। বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারি দেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ৭জন বীরশ্রেষ্ট সমত্মানের স্মৃতিসত্মম্ভ স্থাপনা উলেস্নখ্যযোগ্য।

উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক মানের ৫ তারকা হোটেল মোমো ইন এবং শিশুদের চিত্তবিনোদনের স্থান ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক সদর উপজেলাতেই অবস্থিত। এ উপজেলায় তৎকালীন পাকিসত্মানের প্রধানমন্ত্রী জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধূরী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক রোমেনা আফাজ, এম.আর আকতার মুকুল, বি.এম ইলিয়াস, ভাষা সৈনিক গাজীউল হক, পলস্নী কবি রোসত্মম আলী কর্ণপুরী, কণ্ঠশিল্পি আঞ্জুমান আরা জম্ম গ্রহণ করেছেন।

বগুড়া সদর উপজেলার পটভূমি বেশ উচ্চ এবং প্রায় সমতল। এখানে প্রায়ই মাটি ফসলের জন্য উপযুক্ত এবং মধ্যম পরিস্থিতির উপজেলা। ধান, গম, পাট, তিল, মসুর ডাল, মুগ ডাল ইত্যাদি ফসলের চাষ এখানে সাধারণ। আগাছ ও উদ্ভিদ চারা প্রচুর পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক প্রদূষণ এবং স্থানীয় প্রদূষণ প্রবণতা অনুসরণ করে দেওয়া হয়। এটি প্রায় স্বাভাবিক একটি গ্রামীণ এলাকা এবং কৃষি অনুযায়ী প্রধানত ব্যবহৃত।

ইউনিয়ন সমূহঃ

বগুড়া সদর উপজেলার ইউনিয়ন গুলির তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:

ফাঁপোর

সাবগ্রাম

নিশিন্দারা

এরুলিয়া

রাজাপুর

শাখারিয়া

শেখেরকোলা

গোকুল

নুনগোলা

লাহিড়ীপাড়া

নামুজা

বগুড়া সদর উপজেলার ঐতিহ্যঃ

বগুড়া সদর উপজেলা ঐতিহ্যের প্রায় সমৃদ্ধ একটি অংশ। এই এলাকায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে বিভিন্ন রাজার রাজধানী হিসেবে ব্যবহার হতো। বগুড়া সদরের অতিরিক্ত ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন মহাস্থানগড় গৌড়ে।

এই অঞ্চলে বহু প্রাচীন মন্দির, ঐতিহাসিক স্থান, এবং ঐতিহ্যবাহি উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়। গাজী পিরের মাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজবাড়ী, মাহাস্থানগড় গৌড় ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থানগুলি এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক স্মৃতির নিদর্শন। এছাড়াও, বগুড়া সদরে বহু সাংস্কৃতিক উৎসব ও মেলার অনুষ্ঠান প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় যা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহি সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির উদাহরণ।

বগুড়া সদর উপজেলার ভাষা ও সংষ্কৃতিঃ

বগুড়া সদর উপজেলার ভাষা এবং সংস্কৃতি প্রায়ই বাংলা ভাষার বিভিন্ন রূপ ও আদর্শের সাথে মিশে থাকে। সাধারণভাবে এই অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষা ব্যবহার করে এবং তাদের সংস্কৃতি বাংলাদেশের সাধারণ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গণ্য হয়।

এই অঞ্চলে বাংলার সাংস্কৃতিক অংশ উল্লেখযোগ্য রয়েছে যেমন বাংলা ভাষার ব্যবহার, বাংলার লোকসাহিত্য, সংগীত, নাট্য, প্রথাগত উৎসব, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রথা ইত্যাদি। মানুষের সামাজিক জীবনের মাঝে এই উপজেলার নৃত্য, গান, রচনা, এবং প্রতিরূপ প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত থাকে।

এই অঞ্চলের মানুষ বাংলাদেশের সাধারণ ভাবে মেলামেশা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক বিচরণ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার অংশীদার হিসেবে গণ্য। তাদের প্রাণ্তিক উৎসব, পর্বতীয় লোকসাহিত্য এবং ভাষায় সাংস্কৃতিক ধারার অংশ সমৃদ্ধ।

বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের কার্যাবলীঃ

বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের কার্যাবলী স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও দায়িত্বের বিস্তারিত নির্দেশিকা বিবরণ করে। এই পরিষদ একটি অনিবার্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যা স্থানীয় উন্নয়ন, প্রশাসনিক কাজ, ও সেবা প্রদানে মূলত সক্ষম।

বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের কার্যাবলী উল্লেখ করা যায় নিম্নলিখিত কাজগুলি সম্পর্কে:

  1. স্থানীয় উন্নয়নের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সহায়তা ও নীতি গঠন।
  2. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সারসংক্ষেপ, পরিবহন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ ও সাহায্য প্রদান।
  3. মানবাধিকার, সামাজিক সুরক্ষা, নারী ও শিশু কল্যাণে কার্যক্রম চালানো।
  4. বাজার ও ব্যবসায়িক বিকাশে প্রোত্সাহনা ও সাপোর্ট প্রদান।
  5. প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সহায়তা ও প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি।
  6. পর্যটন ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক উন্নয়নে প্রোত্সাহন ও প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদান।
  7. আইন ও বিচারে সাহায্য, সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

পরিষদের কার্যাবলী এই ধারাবাহিক কাজের সংগ্রহে স্থানীয় সমাজের উন্নতি ও প্রগতির জন্য কাজ করে। তারা স্থানীয় সরকারি স্থান হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্থানীয় সমাজের উন্নয়নে অবদান রয়েছে।

বগুড়া সদর উপজেলা সরকারি অফিসঃ

বগুড়া সদর উপজেলা সরকারি অফিসের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:

  1. বগুড়া সদর উপজেলা প্রশাসনিক কার্যালয়
  2. বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  3. বগুড়া সদর উপজেলা পুলিশ স্টেশন
  4. বগুড়া সদর উপজেলা নগর পৌরসভা
  5. বগুড়া সদর উপজেলা মহিলা ও শিশু কল্যাণ অফিস
  6. বগুড়া সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস
  7. বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি অফিস
  8. বগুড়া সদর উপজেলা কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির অফিস

খেলাধুলা ও বিনোদন

খেলাধুলায় বগুড়া অত্যান্ত সক্রিয় এবং পুরাতন ঐতিহ্যবাহী। গ্রামীণ এলাকার সার্বিক পরিবারে খেলা যেমন হাডুডু, কাবাডি, দারিয়াবান্দা, গোল্লাছুট, লুকাচুরি, লাটিখেলা, এবং ঘুড়িউড়ানো এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রচলিত রয়েছে। এছাড়াও, আধুনিক খেলাগুলির মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিস, এবং অন্যান্য খেলার জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বৃদ্ধি প্রাপ্ত করেছে। বগুড়া শহরের ফুটবলে ঐতিহ্যিক মৌখিকতা অত্যন্ত প্রকট।

আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য শহরে একটি স্টেডিয়াম রয়েছে, যা “শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম” নামে পরিচিত। এই স্টেডিয়ামে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলাগুলি অনুষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে জাতীয় লীগও এখানে অনুষ্ঠিত হয়।

বগুড়া সদর উপজেলা ফুটবলে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং অনেকবার টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং শফিউল ইসলাম এই অঞ্জলের বাসিন্দা হয়েছেন

বগুড়া সদর উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান, ৭নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বগুড়া সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ নির্ভরযোগ্যভাবে নেতৃত্ব করেছেন। সারা দেশে এবং বগুড়া জেলায়ও ন্যায়ের জন্য জনগণ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের  মতো সমর্থন প্রদান করেছে, স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইতে একমত হয়েছে।

বগুড়া সদর উপজেলায় ভাষা সৈনিক গাজিউল হক, প্রাক্তন সংসদ সদস্য এ.কে মজিবর রহমান, ডাঃ জাহিদুর রহমান, ছাত্র নেতা মোস্তাফিজার রহমান পোটল, খোকন, সাইফুল, হিটলু, এটিএম মুসা পেস্তা, মোঃ মমতাজ উদ্দিন, শহীদ আবু সুফিয়ান, শহীদ ফজলার, এটিএম জাকারিয়া, গোলাম জাকারিয়া খান, আজিজ আহমেদ টকি, শহীদ চান্দু, আনোয়ারুল করিম এবং অনেকেই মন্তব্যযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এই অভিজ্ঞানে প্রথম শহীদ হন ঠেংগামারা বাসিন্দা শহীদ তোতা মিয়া।

২৫ শে মার্চে প্রতিরোধের যুদ্ধে বগুড়া।

২৫ শে মার্চে, কালো রাত্রিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে প্রস্তুত পাকিস্তানি সৈন্যরা রংপুর ক্যান্টনমেন্টে সমাহিত হয়েছেন। বগুড়া থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন যে, এক দল পাকিস্তানি সৈন্য রংপুর থেকে পৌঁছানো হয়েছে। রাতের শেষে এই ঘটনা মোকামতলার দিকে রওনা দেওয়া হবে, বগুড়াবাসিদের কাছে সতর্ক হয়া হবে বলে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। হত্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সমস্ত জেলায় একসাথে অপারেশন চালানো হবে।

এ খবর পাওয়া মাত্র দ্রুত জীপ নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। চিৎকার করে আসন্ন বিপদের কথা প্রচার করলেন-‘‘জাগো জাগো বগুড়াবাসি। রংপুর থেকে আর্মি রওনা দিয়েছে। রাস্তায় ব্যারিকেড লাগাও প্রতিরোধ কর। জাগো জাগো’’। বগুড়া শহরের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় জীপ নিয়ে প্রচার করলেন ওসি সাহেব।

তার মধ্যে মমতাজ উদ্দিন, হায়দার আলী, এ কে মজিবর রহমান, মোশারফ হোসেন মন্ডল, লাল ভাই, তপন, স্বপন, ডাঃ জাহিদুর রহমান রয়েছেন। ওসি সাহেব বলেছেন, “সমস্ত ঘটনা খোলাম। আপনারা প্রতিরোধ করুন, পুলিশও আছে।”

শহরে রাতের অন্ধকারে স্লোগান নিয়ে উঠেছে সকল বাঙালি, অস্ত্র ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রতি ইচ্ছা করে। কালিতলা মসজিদ থেকে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সকালের মধ্যেই সমস্ত বগুড়া শহরে শ্লোগানের মোহাময়ে মোহাময়ে জনগণ উত্তেজিত হয়েছে।পাকিস্তানি আর্মিদের জীপগুলো এসে থামলো, দেখলো রাস্তা বড় বড় গাছের ডাল দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা। পাকিস্তানের সৈন্যরা ব্যারিকেড সরালো এবং মোকামতলার দিকে রওনা হলো।

ঠেঙ্গামারার দিকে এসে পাকিস্তানি সৈন্যদের গাড়ির লড়ি থামল। পাকিস্তানি মেজর ইশারা দেয়ার সাথে সবাই দ্রুত পজিশন নিল। তারপর বলল ফায়ার। প্রথমে বুকে গুলি খেয়ে পাখির মত গাছ থেকে ঢলে পড়ল ঠেঙ্গামারার রিকসা চালক তোতা। এই তোতাই বগুড়ার প্রথম শহীদ।

মুক্তিযুদ্ধকালিন যে স্থানে  অধিক সংখ্যা নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যা করা হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, হাট-বাজার ও ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত ঘটনার স্থান

১। মহিলা কলেজ ( বর্তমানে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, সেনা ক্যাম্প, বগুড়া।)

২। বগুড়া অটোজ, বগুড়া, সেনা ক্যাম্প, বগুড়া।

৩। বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া, সেনা ক্যাম্প, বগুড়া।

৪। বগুড়া মুখ ও বধির বিদ্যালয়, বগুড়া, সেনা ক্যাম্প, বগুড়া।

বধ্যভূমির নাম এবং উক্ত বদ্ধভূমিতে শহীদ যারা

১। কৈচড় স্কুল, ফাঁপোর ইউনিয়ন-২৬ জন।

২। ফুলবাড়ি আমতলা,  আযিযুল হক কলেজ রোড-৩৩ জন।

৩। বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিনপার্শ্বে ৭ জন।
৪। উত্তর চেলোপাড়া (নারুলী), রেল ক্রসিং সংলগ্ন-২৩০ জন।

দর্শনীয় স্থান

গোকুল ইউনিয়নের মেধ নামক স্থানে ঐতিহাসিক বেহুলা- লক্ষিদরর বাসর ঘর, চাদমুহা হরিপুর- শাহারবিল এলাকায় চাদ সওদাগরের বসত বাড়ী, নামুজা ইউনিয়নের চিংগাসপুরে পদ্মা দেবীর বাড়ী, লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের রায়মাঝিড়ার কালু গাজীর কোট, বৃন্দাবন(বৃন্দাবনপাড়া), রামশহর, বামনপাড়া ভিমের জাং্গাল, পলাশবাড়ী, মথুরা এবং নোনগোলা ইউনিয়নের হাজরাদিঘী এফতেদায়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন সাপের ওঝা ধনন্তরীর বাড়ী অবস্থিত।

উপজেলার প্রানকেন্দ্র বগুড়া সাথমাথায় সার্কিট হাউজ সংলগ্ন যা বর্তমানে প্যালেস মিউজিয়াম নামে বহুল পরিচিত। ঐতিহাসিক আলতাফূননেছা খেলার মাঠ ও বগুড়া উডবাণ পাবলিক লাইব্রেরী যা ১৮৫৪ সালে স্থাপিত হয়েছে। উডবান পাবলিক লাইব্রেরী সংলগ্র স্থানে বিটেনের রাজপরিবারের সদস্য এডওয়াটর্ড ৭ম জজের একটি প্রচীন ভাসকার্য রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

  • তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধূরী,
  • প্রজাবন্ধু মৌলভী রজিবউদ্দীন তরফদার, এম এল এ
  • বিশিষ্ট সাহিত্যিক রোমেনা আফাজ,
  • এম.আর আকতার মুকুল,
  • বি.এম ইলিয়াস,
  • ভাষা সৈনিক গাজীউল হক,
  • পল্লী কবি রোস্তম আলী কর্ণপুরী,
  • কণ্ঠশিল্পী আঞ্জুমান আরশেষ

পরিশেষে

বগুড়া সদর, এটি একটি অমূল্য নগর যা ঐতিহাসিক সমৃদ্ধি এবং সংস্কৃতির সাক্ষর স্থান। এই সুন্দর নগরটি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমি এবং আধুনিক সময়ের সাথে সংগঠিত, এটি একটি অনন্য সমন্বয়ে উন্নত হয়েছে। এখানে বাসসহ অনেক বৈশিষ্ট্যজনক উপাদান রয়েছে, যা এই স্থানটির আত্মগতি এবং উন্নতির কথা বলে দিচ্ছে।

বগুড়া সাদরের সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক ভবিষ্যত, এবং তার সবোর্ধ বৈশিষ্ট্যগুলি একত্রে একটি সমৃদ্ধ এবং উন্নত নগর তৈরি করেছে। এই অদ্ভুত স্থানটির সাথে জড়িত ব্যক্তিবাদীদের এবং পরিস্থিতিতে ভূমিকা রয়েছে, যারা এটির উন্নতি এবং উন্নতির প্রতি সহযোগিতা করছে। বগুড়া সাদর, একটি সমৃদ্ধ, ঐতিহাসিক, এবং সৌন্দর্যময় নগর, এটি ভবিষ্যতেও একটি নির্ভরযোগ্য স্থান হতে অগ্রসর করতে তৈরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *