বগুড়া ধুনট উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার অবস্থান উত্তর অক্ষাংশে। যা বগুড়া জেলা থেকে দক্ষিণ পূর্বে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
ভৌগলিক পরিচিতি
বগুড়ার ধুনট উপজেলা ২৩°২৯’ থেকে ২৩°৪২’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯’ থেকে ৯১°০৫’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। ১৮২১ সালে রাজশাহী জেলার আদমদীঘি, রংপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ, নওখিলা, বগুড়া ও শেরপুর, গোবিন্দগঞ্জ এবং দিনাজপুর জেলার লাল বাজার, বদলগাছি, ও ক্ষেতলাল থানার সমন্বয়ে বগুড়া জেলা গঠিত হয়।
১৮৪৫ রায়গঞ্জ থানা বগুড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৮৭৪ সালে রায়গঞ্জ থানা পাবনা জেলার সাথে যুক্ত করা হলে বর্তমান ধুনট গ্রামে পরীক্ষামূলক একটি স্বতন্ত্র থানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধুনট উপজেলার উত্তরে গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা, দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, এবং পশ্চিমে শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলা অবস্থিত।
ধুনট উপজেলার পটভূমিঃ

বগুড়া জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো ধুনট উপজেলার নামকরণের পিছনেও এক অদ্ভুত কারণ আছে বলে লোকমুখে জানা যায়। শোনা যায় এক সময় এই এলাকায় কোন ধরনের জনবসতি ছিলো না। আজ থেকে কয়েকশো বছর পূর্বে এ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত ছিল।
১২৮৬ সালের শেষে এবং ১৩০৪ সালের একদম শুরুর দিকে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই এলাকাটি জলভাগ থেকে স্থলে পরিণত হয় এবং উর্বর মাটি গঠিত হওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে জনবসতিও শুরু হয়। তবে এই উপজেলা নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণ রয়েছে। আবার শোনা যায় এক সময় ইছামতি নদীর নাব্যতা বেশি ছিলো এবং প্রায় তিনটি নদীর মোহনা এখানে থাকায় সেই সময়ের কাকশাল বংশীয় মাস্তানদের ত্রাসের রাজত্ব ছিলো।
যে কোনো নৌকা এ পথে এলে তারা নৌকা পথে আসা লোকদের ধন, মাল লুট করতো বলে লোকমুখে শোনা যায়। জনশ্রুতিতে, মূলত এই ধরনের ধন লুটপাটের কারণেই এই স্থানের নাম হয়েছে ধূনট।
ইতিহাস থেকে ধুনট উপজেলায় যুদ্ধের কিছু বর্ণনাও পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঊনিশে এপ্রিল পাকবাহিনী ধুনট থানা আক্রমণ করে এবং তাদের গুলিতে একজন সিপাহী নিহত হয়। অতঃপর ছাব্বিশে এপ্রিল এলাঙ্গী বন্দরে প্রায় তেত্রিশ জন মানুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী।
সাতাশে এপ্রিল পুনরায় তারা ধুনট থানা আক্রমন করে ৫ জন সিপাহীকে হত্যা করে। এছাড়াও এর পর থেকে ১১ ডিসেম্বর এর আগ পর্যন্ত পাকবাহিনী প্রায় ১৭ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। অতঃপর ১১ ডিসেম্বর এই উপজেলাটি পাকবাহিনী মুক্ত হয়। এখানে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এবং পরবর্তীতে এখানে একটি শহী স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে
শিক্ষা

বগুড়া জেলার অন্যতম এ উপজেলা ধুনটের শিক্ষার মান মোটামুটি প্রায় অনেক উন্নত। উপজেলা শিক্ষার হার প্রায় ৬০%। এখানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৬ টি, বেসরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় রয়েছে ৯৭ টি, স্যাটেলাইট স্কুলের সংখ্যা ১০ টি, কিন্ডার গার্টেন ৮টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩টি, উচ্চ বিদ্যালয় ৩৫ টি, কলেজ ৮টি, দাখিল মাদ্রারাসা ১৬ টি, এবং সিনিয়র মাদ্রাসা সংখ্যা রয়েছে মোট ৭ টি।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো ধুনট উপজেলা সদরের ধুনট সরকারি এন ইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১ সালে স্থাপিত), ধুনট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৮ সালে স্থাপিত), গোসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (স্থাপিত ১৯১৮), ধুনট পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (স্থাপিত ১৯৭৭)। এছাড়াও রয়েছে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের ধুনট সরকারি কলেজ (স্থাপিত ১৯৭২), ধুনটের মথুরাপুর ইউনিয়নের মুলতানি পারভীন শাহজাহান তালুকদার বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত), ধুনট মহিলা কলেজ (স্থাপিত ১৯৯৬), জোড়খালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা (স্থাপিত ১৯১১) ইত্যাদি।
অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্য
ধুনট উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা খু্বই উন্নত। বেশকিছু ব্যবসা বাণিজ্য বর্তমানে ধুনট উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উল্লেখযোগ্য ব্যবসা বাণিজ্যগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
মেসার্স এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, ধুনট, বাজার। | মেসার্স কৃষি ভান্ডার, ধুনট,বগুড়া। |
মেসার্স মেছের এন্টারপ্রাইজ, ধুনট। | মেসার্স নিশাত এন্টারপ্রাইজ, ধুনট, বগুড়া। |
মেসার্স আল-আমীন কনস্ট্রাকশন, ধুনট, বগুড়া। | মেসার্স এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, ধুনট বাজার। |
মেসার্স সামছুল বারী মথুরাপুর, ধুনট। | মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজ, ধুনট বাজার। |
মেসার্স জেনিন ট্রেডার্স চিকাশী, ধুনট। | মেসার্স মেহেদী হাসান এন্টারপ্রাইজ, ধুনট, বগুড়া। |
মেসার্স বিপাশা কনস্ট্রাকশন, ধুনট। | মেসার্স আ: খালেক মথুরাপুর, ধুনট। |
জনজীবন ও খাদ্যদ্রব্যাদি
আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১ অনুযায়ী ধুনট উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস হলো কৃষি, যা প্রায় ৭২.২০%। এ অঞ্চলের প্রধান কৃষি ফসল সমূহ হলো ধান, পাট, গম, সরিষা, পেঁয়াজ, শাকসবজি ইত্যাদি। তবে অন্যান্য ফসলাদি যেমন: আউশ ধান, ছোলা, শনপাট, খেসারি, কাউন, তামাক, তিসি, চিনা, অড়হর ইত্যাদি ফসলগুলো সময়ের সাথে আজ বিলুপ্ত প্রায়। এ অঞ্চলের প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, লিচু, কলা ইত্যাদি। গ্রামীণ জনজীবনে এখানে প্রচুর হাটবাজার ও মেলাও দেখা যায়। এর মধ্যে ধুনট বাজার, গোসাইবাড়ী বাজার, সোনাহাটা হাট, বৈশাখী মেলা, চরক মেলা, চৈতালী মেলা, এবং বেলকুচি মেলা উল্লেখযোগ্য। এই উপজেলার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ফসল হলো ধান, পাট, ও শাকসবজি।
দর্শনীয় স্থান
ভান্ডারবাড়ী গোয়েন বাঁধ
বগুড়া ধুনট উপজেলায় এই ভান্ডারবাড়ী গোয়েন বাঁধ একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত যার অবস্থান হলো ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী গ্রামে। এটি যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এই গোয়েন বাঁধ দেখতে আসে।
কীভাবে যেতে পারেন?
বগুড়া সাতমাথা থেকে সিএনজি অথবা করতোয়া গেটলক বাসে করে বগুড়া শেরপুর উপজেলার ধুনট মোড়ে নামতে হবে। বাস থেকে নেমে আবারও সিএনজি যোগে ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের উদ্দেশ্য দিতে হবে।
খেলাধুলা ও বিনোদন
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই উপজেলাতেও গ্রামীন খেলাধুলা যেমন হাডুডু, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা, নৌকা-বাইচ ইত্যাদি প্রচলিত। এছাড়াও এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল এসব খেলারও প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে এই উপজেলায় কোনো স্টেডিয়াম নেই।
যোগাযোগ

বগুড়া জেলা থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিন পূর্বে ধুনট উপজেলা অবস্থিত। যোগাযোগ পরিবহন গুলো হলো সিএনজি, বাস ইত্যাদি। ধুনট উপজেলায় আসতে হলে বগুড়া সাতমাথা থেকে শেরপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে সিএনজি অথবা বাস যোগে আসতে হবে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
বর্তমানে ধুনট উপজেলার আয়তন প্রায় ২৪৭.৭৫ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ২,৬৬,০০১ জন (২০০১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী), জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৩২ জন। তন্মধ্যে ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ১,৮২,৪৮১ জন।
ইউনিয়ন সমূহ

সর্বমোট দশটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলা গঠিত। ইউনিয়নসমূহের তালিকা নিম্নরূপ:
নিমগাছি ইউনিয়ন পরিষদ | ধুনট সদর ইউনিয়ন পরিষদ |
কলেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ | এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদ |
চিকাশী ইউনিয়ন পরিষদ | চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ |
গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ | মখুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ |
ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ | গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদ |
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বসমূহ
- জনাব বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ হাবিবর রহমান, মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বগুড়া-৪০বগুড়া-৫ শেরপুর-ধুনট নির্বাচন এলাকা।
- জনাব এ,জি,এম বাদশাহ্, মেয়র, ধুনট পৌরসভা,বগুড়া।
- জনাব টি,আই,এম নূরুন্নবী তারিক,মাননীয় উপজেলা চেয়ারম্যান,ধুনট,বগুড়া।
- জনাব মোছাঃ নাজনীল নাহার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ,ধুনট,বগুড়া।
- জনাব মোঃ আব্দুল হাই খোকন, মাননীয় ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ,ধুনট,বগুড়া।
পরিশেষে
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার অন্তর্গত ধুনট উপজেলা একটি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ এলাকা। এটি পাটের উৎপাদনের জন্য পরিচিত, এবং পাট শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র। এই উপজেলার বাসিন্দারা প্রধানত কৃষি, পাট ও বাণিজ্যিক কাজে নিয়োজিত। ধুনট উপজেলার অর্থনৈতিক কাঠামো পরিষ্কার, প্রগতিশীল এবং খুবই উন্নত। সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে প্রাচীনতম ঐতিহ্যের অনুকরণীয় অংশ রয়েছে। প্রধান নদীসমূহ যেমন: যমুনা, বাঙ্গালী ও ইছামতী নদী এই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, গ্রামীণ জীবন, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং মানুষের রুচিশীলতায় ধুনট বগুড়া জেলার অন্যতম একটি উপজেলা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

আমার প্রফাইলে স্বাগতম, আমি আরিফুল ইসলাম, StudyTech-এর CEO এবং Founder। আমি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, SEO, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ এবং ফ্রিল্যান্সিং করছি প্রায় ১০ বছর ধরে এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত ব্লগ লেখার চেষ্টা করি নিজের নলেজ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে, যাতে সবাই উপকৃত হয়।
আমি ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি আমার নিজস্ব মার্কেটিং এজেন্সির মাধ্যমে আইটি রিলেটেড সাপোর্ট দিয়ে থাকি, যেমনঃ ওয়েবসাইট বানানো, ওয়েবসাইতের জন্য এসইও করা, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ভিডিও এডস তরি, গুগল এবং ফেসবুক এডস বুস্ট সার্ভিস দিয়ে থাকি। এবং আমি একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারও পরিচালনা করি, যেখানে নতুনদের ডিজিটাল স্কিল এবং ফ্রিল্যান্সিং শেখাই।
আমার সাথে কানেক্ট হতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়াতে:
🔗 ওয়েবসাইট: arifulislam.com.bd
🔗 লিংকডইন: linkedin.com/in/arifinfo
🔗 ফেসবুক: facebook.com/ariful.info