বগুড়া সাতমাথা হচ্ছে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র

বগুড়া সাতমাথা

বগুড়া সাতমাথা হচ্ছে বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র। দই বা দধিখ্যাত বগুড়া সদরে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি স্থান হচ্ছে সাতমাথা। বিশেষ ভাবে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে সম্মান জানাতে, তাদের ছবি দিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার নামে একটি সৌন্দর্যময় শহর তৈরি হয়েছে। এই স্কয়ার হলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে সাতটি মৌলধারের সড়ক মিলিতভাবে সংযোগ করে।

বগুড়া জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক, জিপিও, সার্কিট হাউজ, সপ্তপদী মার্কেট, নিউ মার্কেট এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত।

সাতমাথার ভূমিকা

প্রথমেই আপনার কাছে একটি প্রশ্ন করছি? আপনি কি এমন একটি স্থানের নাম জানেন, যেখানে সাতটি রাস্তা একই স্থানে মিলে যায়? কিংবা শুধুমাত্র একটা মোড়কে ঘিরেই পুরো শহর ঘুরপাক খেতে থাকে। সম্ভবত আপনি পাবেন না। সাতমাথা তার নানারু্প নিয়ে সবসময়ই অন্যকোন মোড় থেকে স্বাতন্ত্র্য।

বগুড়া সাতমাথার পরিচয় 

প্রথমে বলে নেই এই সাতমাথার মোড়েই পাবেন বগুড়ার বিখ্যাত দই বা দধির বিভিন্ন মানের অনেক দোকান। ঠিক সাতমাথার মোড়ে রয়েছে সপ্তপদি মার্কেট, নিউ মার্কেট, হকার্স মার্কেট, ফলের দোকান, বগুড়া জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক, জিপিও, সার্কিট হাউজ, ফুলের দোকানের সমারহসহ অনেক কিছু পাবেন এখানে। এখন বামে হেঁটে গিয়ে কতগুলো পার্টি অফিস, চোখে পড়বে।

এই অফিসের সামনে সবসময় অনেক লোকের ভিড় দেখা যায়, তবে ভিড় দেখে ভিমড়ি খাবার কিছু নেই। তবে এই সাতমাথাই আছে বিভিন্ন মেসিনারিজ এর অনেক দোকান। আর এর পাশে রয়েছে জাতীয় পরিচয় বহন কারি মুজিব মঞ্চ। সপ্তপদি মার্কেটে আছে মোবাইল কেনাবেচাসহ মেরামতের অনেক দোকান।

যদি একটু মনের প্রশান্তি পেতে চান পাশে শহীদ খোকন পার্কে জিরিয়ে নিতে পারেন আশা করি ভাল লাগবে। 

সাতমাথার সকাল বেলা

সকালের সাতমাথা একটি ব্যস্ত শহরের চিত্র, এক দিকে বি আর টি সি বাসের হাকডাক, অপর দিকে বগুড়া, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী। অন্যদিকে আবার স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের সাথে রিকশাওয়ালার মান অভিমান। কিন্তু সকালের উৎসবের পরিপূর্ণতা দান করে ফলের দোকানগুলি।

দেশব্যাপী থেকে আসা ফলমুল নিয়ে একটি বৃহত্তর হাটে বসে থাকে, হকার্স মার্কেট থেকে বি আর টি সি মার্কেট পর্যন্ত। বিশেষ করে লিচু, আম এর সময়ে। লিচুর দিনগুলি থাকে কম, তবে তার পাতাগুলি সেই দিনগুলিতে রাস্তার পাশে ছড়িয়ে থাকে, এবং তার ফলে হৃদয়কাঞ্চন করে যেন একটি আত্মবিশেষ বাগান।

বগুড়া সাতমাথার বিকেল বেলা

তবে সাতমাথার ব্যস্ততা, লোকসমাগম এর পুর্ন প্রতিচ্ছবি আপনি দেখতে পাবেন বিকেল বেলায়। সাতমাথার মূল বিল্ডিং হল সপ্তপদী মার্কে্ট। এই মার্কেটের সামনে বিকেল বেলায় বসে ছোলাসহ ও নানা ধরণের দোকানগুলি। ডান দিকে কয়েকটি ফলের দোকান ও আছে, তবে সন্ধ্যা বাড়লে ফলের দোকানগুলি আরও বাড়ে। তবে সেখান থেকে আমার মতে না কেনাই ভালো।

আলো আধারে ফল ভালো পাওয়া যায় না তবে দেখেশুনে নিতে পারবেন। বামের দিকে একজন পাপড়ী বিক্রেতা বিগত ৮ বছর ধরে বসছেন। কথা হয়েছিল একবার একটি ছোলা বিক্রেতার সাথে, শ্যামলা এই মামা তার পিতাকেও এখানে ব্যবসা করতে দেখেছেন। তবে ব্যস্ততার কারণে, আর হাতে কোন সাংবাদিক মার্কা ক্যামেরা না থাকায়, তার সাথে বেশি কথা বলা যায়নি, উনি দাম দেননি আর কিছু।

বগুড়া সাতমাথার মজার খাবার সমূহ

সাতমাথার মূল বিল্ডিং হল সপ্তপদী মার্কে্ট। এই মার্কেটের সামনে বিকেল বেলায় বসে ছোলাসহ ও নানা ধরণের দোকানগুলি। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে, চোখে অনেক ধরনের দোকানগুলি দেখতে পাবেন। বলা যায় যে, রাস্তার উপরে এই দোকানগুলি অবস্থিত। সামনের সারি থেকে প্রথম সারিতে ডিম সেদ্ধ ওয়ালাদের দোকানগুলি থাকে।

তার পরের সারিতে রিকশাওয়ালাদের পোশরা দেখা যায়। একটু আগে সামনে এগোন কিন্তু মোড়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে সাতমাথার ডানদিকে আপনি শিক কাবাব পাবেন, এবং একটু এগিয়ে চটপটির দোকান। 

বগুড়া সাতমাথায় বাহারি চা আড্ডা

কিছু লোক পার্টি করেনা, আর কিছু করে। তবে এদের সবাই চা প্রিয়। এখানের চায়ের দোকানের ভক্তগণ অনেক। লেবু চা, মরিচ চা, মাল্টা চা, নরমাল চা এর মধ্যে দুধ চা পেতে  কষ্ট হয়ে যাই । পরবর্তী সারির দোকানগুলিতে থাকে ভাপা পিঠা বিক্রেতাদের ভিড়, যারা লেয়ারে লেয়ারে ভাপা বানাতে বিশেষভাবে কাজ করে। এখানে আপনি পাবেন, ভুঁড়ির চাপ, লটপটি, হালিম ইত্যাদি।

মুড়ি মামা ও ফুলেল বগুড়া সাতমাথা

পরবর্তী লাইনে দেখা যাবে বাহারি মুড়ি মামাদের । একেকজনের একেক রকমের মুড়ি মাখানো ভালো না লেগে পারেনা। তারপরের সারি অপেক্ষারত প্রেমিকদের। বগুড়া জেলা স্কুলের প্রেমিক পুরুষদের মাঝে সচ্চারিত কাকুতি মিনতি দেখা যায় অধিকাংশ সময়। সুবিধাবশত পাশে ফুলের একরাশ দোকান পাওয়া যায়, তবে সেটা সাতমাথার পাশে।

সাতমাথায় বাহারি রঙের সাইকেলের দোকান

বগুড়া সাতমাথার সাতকোনা হওয়ায় এখানে আরো দুইটি কোনা বাদ রয়েছে। একদিকে আপনি আপনার স্বপ্নের সব রঙের মত সাইকেল পাবেন। বাইসাইকেল খুজতে আপনাকে এখানে আসতে হবে। এখানে বাচ্চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের স্বপ্নের সব রঙের বিভিন্ন দামের এবং মানের  বাইসাইকেল পাবেন।

সাতমাথার ভুবন বিখ্যাত দই বা দধি

বগুড়া সাতমাথার ভুবন বিখ্যাত বগুড়ার দই বা দধি

আর আরেক দিকে দইয়ের দোকান রয়েছে। কোন দই বা দধি ভালো এবং কোনটা খারাপ সেটি নিয়ে তার জন্য এখানে বিতর্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা আপনাকে সাবধানভাবে বলবেন যে, স্পেশাল নামে দই বা দধির দাম বাড়ানোর নতুন প্রতিযোগিতা চলে, কিন্তু সেই স্পেশাল দই বা দধির সাথে নরমাল দই এর স্পেশালিটি এই দোকানগুলির মধ্যে কয়েকটিতে পাওয়া যায়নি, দামের ক্ষেত্রটা ছাড়া।

তবে এখানে এশিয়া, আকবরিয়া, চিনিপাতাসহ কিছু দোকানে অনেক ভালমানের দই বা দধি পাবেন। তবে আরেকটি কথা বলে রাখি মহাস্থানগরের বিখ্যাত কটকটি ও এখানে পাবেন। 

বিকেলের সাতমাথার বিভিন্ন রূপের দৃশ্য 

এই সাতমাথাই বিকেলে আপনি এককোনে বসেই জীবনের বিভিন্ন রূপের দৃশ্য দেখতে পারবেন। এক প্রান্তে, একটি মা তার ছেলেকে বকা দিচ্ছে, অন্য প্রান্তে একটি প্রেমিক তার প্রেমিকার অভিমান ভাঙচ্ছে, আরেক প্রান্তে হয়তো বাবার হাত ধরে ছেলে ডিম খাচ্ছে। রিকশা, অটো, এবং সিএনজি ওয়ালাদের হাঁকডাক ।

রাস্তার পাশে বিভিন্ন নামের বাহারি সব ফলের দোকানে ক্রেতা এবং বিক্রেতার সাথে কথা কাটাকাটির দৃশ্যপট। 

সাতমাথা নিয়ে বিতর্ক 

অনেকে বলছেন, সাতমাথায় নাকি সাতটা রাস্তা নেই। কেউ পান ৬ টা, অন্যেরা আবার ৮ টা। সবাই মনে করছে এই সমস্যায় মুক্তি পেতে তাদের মাথায় একটি উচ্চমান বীরশ্রেষ্ঠের মূর্তি রেখে দেওয়া হয়েছে। নেও বাবা নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাও-তাও সাতমাথা নিয়ে ঝগড়া ঝাটি করো না।

নিশিরুপে সাতমাথা

রাতে সাতমাথার আরেকটি রঙ্গিলা রূপ। সব দোকানকে হটিয়ে দিয়ে একপাশ দখল করে- দুরগামী বাসগুলো, আর অবশিষ্ট সকল টঙ্গের চা দোকান। সেই চা দোকানগুলির লাল চা খুব আকর্ষণীয়। বিশেষভাবে, শীতের রাতে, রাত ১ টা বা ২ টায় চা খেতে এককথায় অপুর্ব লাগে। সাথে যোগ হয় কেক, ডিম এবং অন্যান্য কিছু সুস্বাদু খাদ্যগুলি। 

সাতমাথাতে কিভাবে আসবেন

নাম যেমন বগুড়া সাতমাথা তেমনি এখানে সাত দিক থেকে আসতে পারবেন। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিং, সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, বাংলাদেশের যেকোন প্রান্থ থেকে দই বা দধির শহর সাতমাথাতে আশা যাই। ঢাকা থেকে সাতমাথার দূরত্ব প্রাই ১৯০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকে মাটিরডালি, চারমাথা, রেলগেট/তিনমাথা, শাকপালা, বনানীতে নেমে সি এন জি করে ১০/১৫ টাকা এবং রিকশা/ অটোরিক্সা করে ৪০/৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসতে পারবেন। যদি কেউ রাত্রি যাপন করতে চান এখানে চিন্তা নেই এই মোড় গেশেই আছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল বিভিন্ন মানের এবং দামের।

বগুড়া সাতমাথা নিয়ে আপনার সম্ভাব্য জিজ্ঞাসা ও উওর

প্রশ্নঃ দই বা দধির শহর কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ দই বা দধির শহর বগুড়ার প্রান কেন্দ্রে এই সাতমাথাতে অবস্থিত।

প্রশ্নঃ আপনি কিভাবে এই সাতমাথাতে আসবেন?

উত্তরঃ বাংলাদেশের যেকোন প্রান্থ থেকে আপনি এই সাতমাথাতে আসতে পারবেন।

প্রশ্নঃ সাতমাথাতে কি কি পাওয়া যায়?

উত্তরঃ বগুড়ার বিখ্যাত দই, মহাস্থানগরের কটকটিসহ আরও আনেক কিছু পাবেন।

প্রশ্নঃ সাতমাথাতে কি রাত্রি যাপন করার মতো আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়?

উত্তরঃ সাতমাথাতে রাত্রি যাপন করার মতো বিভিন্ন মানের এবং বিভিন্ন দামের আবাসিক হোটেেল পাওয়া যায়।

উপসংহার 

মাঝ রাস্তায় বড় টিভি দেখতে গিয়ে থমকে পড়তে পারেন, আবার বাংলাদেশের খেলা দেখে সারা রাস্তা জুড়ে আনন্দ করতে পারেন। তবে সাতমাথাতে আসলে বিখ্যাত বগুড়ার দই বা দধি এবং মহাস্থানগরের কটকটির স্বাদ নিতে ভুলে গেলে বগুড়াতে আসার সার্থকতাটাই শুন্য এর খাতাতে রেখে দিলেন। সেই কথাই থাকলো। সাতমাথা সবার মাঝে বেচে থাকুক চিরকাল।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *