ওয়েব ডিজাইন বেশ জটিল হলেও ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে বর্তমানে এটি আগের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজকাল তরুণদের মধ্যে নিজেকে একজন ওয়েব ডিজাইনার তৈরী করার প্রবণতা দেখা যায়। আর তাই, সেই আগ্রহী তরুণদের কথা বিবেচনা করে এই আলোচনা গাইড। তো চলুন, জানা যাক মূলত-
ওয়েব ডিজাইন কি?
ভিজ্যুয়াল + ইন্টারঅ্যাকশন = ওয়েব ডিজাইন
অনেক তরুণ ডিজাইনারদের ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। মূলত, ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে ডিজাইন সম্পর্কিত, ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত নয়। অবশ্যই যদি আপনার কিছু কোডিং ল্যাংগুয়েজ যেমন, HTML, CSS, Java ইত্যাদি সম্পর্কে জানা থাকে তাহলে এতে আপনার দক্ষতা বাড়বে। তবে শুধু এগুলোর মাধ্যমে আপনি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন না। কেননা, এটি ওয়েব ডিজাইনের মূল বিষয় নয়।
ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে ইউজারদের ওয়েব-পেইজের ইন্টারএ্যাক্ট করার একটি উপায়।
ওয়েবসাইট ডিজাইনের প্রকারভেদ
অনলাইনে এমন অনেক আর্টিকেল দেখে থাকবেন যেখানে একটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের স্টাইল সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। মূলত, সঠিকভাবে একটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের দুটি উপায় রয়েছে: অ্যাডাপ্টিভ এবং রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট।
- অ্যাডাপ্টিভ ওয়েবসাইট : অ্যাডাপ্টিভ ওয়েব ডিজাইন একটি ওয়েবসাইটের দুটি বা তার চেয়েও অধিক ভার্সন ব্যবহার করে, যা বিভিন্ন সাইজের ক্ষেত্রে কাস্টমাইজ করা হয়।
- রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট: সাধারণত রেসপন্সিভ ওয়েবসাইটগুলি পার্সেন্টেজ এর ওপর ভিত্তি করে ব্রেকপয়েন্টের সাথে ফ্লেক্সিবল গ্রিডগুলির সমন্বয়ে প্রতিটি স্ক্রিন সাইজের একটি কাস্টম লুক তৈরী করে থাকে।
এছাড়াও, কিছু মডার্ণ ডিজাইন টুল রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ডিজাইনকৃত ওয়েবসাইট যেকোন ডিভাইসেই চমৎকার দেখায়। এবং সেইসাথে আপনি কিভাবে কোডিং করবেন তা জানার প্রয়োজন পড়ে না।
ওয়েব ডিজাইন: A Beginner’s Guide
ওয়েব ডিজাইন ইলিমেন্ট
কোনও ওয়েবসাইট ডিজাইন করার সময় সাইটের লুক এবং পারফরমেন্স দুটোই বিবেচনা করা আবশ্যক। এই ইলিমেন্টগুলির মাধ্যমে কোনো ওয়েবসাইট ডিজাইন করলে তা কোনোরকম পরিমাপ ছাড়াই সাইটের পারফরমেন্স ম্যাক্সিমাইজ করতে সাহায্য করবে। ইলিমেন্টগুলো নিম্নরূপ-
লেআউট
আপনি কীভাবে আপনার কনটেন্ট সাজাবেন তা নির্ভর করবে আপনার সাইটের পারফরমেন্স এবং লুকের ওপর। মূলত, ওয়েবসাইট লেআউটের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকলেও কিছু নীতি আপনার অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আপনি যদি কোড লিখতে না জানেন তবে, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ডিজাইন টুলগুলোর সীমাবদ্ধতা জানতে আপনার এটি জানা অপরিহার্য। নতুবা, আপনি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আটকে যেতে পারেন।
কালার
একটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের ক্ষেত্রে সবগুলো ইলিমেন্টের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইলিমেন্ট হচ্ছে কালার। এটা মাথায় রাখা জরুরী যে, কালার সাইকোলজী সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আপনার সাইটের জন্য কালার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনার ব্র্যান্ড এবং যে ম্যাসেজটি আপনি জানানোর চেষ্টা করছেন তার দিকে ফোকাস করুন। এই দুটির সাথে মিল রেখে আপনি কালার নির্বাচন করতে পারেন।
ফন্ট
ওয়েবসাইট ডিজাইনের সময় সহজেই পাঠযোগ্য এমন ধরনের ফন্ট নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনি Canva এর ন্যায় টুলগুলোর সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও PageCloud এর মতো ওয়েব ডিজাইন টুলের মাধ্যমে কোনো অ্যাপের সাহায্য ছাড়াই ফন্ট সংযুক্ত করতে পারেন।
শেপ
বিগত কয়েক বছর ধরে ওয়েব ডিজাইনে গ্রাফিক্যাল ইলিমেন্টগুলির ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। সুন্দর রঙ এবং আকারের সংমিশ্রণটি আপনার সাইটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য, এমনকি অনেক ধরনের কাজে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। কোডের উপর নির্ভর না করে ডিজাইন সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে আপনি এই ধরনের ইলিমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
ওয়েব ডিজাইন: A Beginner’s Guide
ওয়েব ডিজাইনে কোন কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ
চলুন, আমরা ওয়েব ডিজাইনার হওয়ার ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সাইডের কথা চিন্তা করি। শব্দটি বেশ জটিল মনে হচ্ছে? আসলে এগুলোর সম্পর্কে আপনি একবার জানতে পারলে আপনার কাছে বেশ সহজ এবং মজাদার মনে হবে।
ভিজ্যুয়াল ডিজাইন
ভিজ্যুয়াল ডিজাইন সাধারণত ডিজিটাল প্রোডাক্টগুলোর দিকে ফোকাস করে থাকে। এই ধরনের ডিজাইনের প্রিন্সিপল হচ্ছে ওয়েবসাইটের লুক নির্ধারণ করা। যেমন: টাইফোগ্রাফি, গ্রিড সিস্টেম, কালার থিওরি ইত্যাদি।
মূলত, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন মুড বোর্ড তৈরীর ক্ষেত্রে, ওয়েব ফন্ট এবং কালার প্যালেটগুলির মাধ্যমে এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ দিয়ে থাকে।
ডিজাইন সফ্টওয়্যার
একজন কারিগর হিসেবে আপনার কাজের জন্য সঠিক টুলসের প্রয়োজন। একটি ইন্ডাস্ট্রির মান সম্পর্কে জানা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সহায়ক। একটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের সময় সরাসরি ওয়েব ব্রাউজারে কাজ করা যায় এমন সব টুলগুলো (অ্যাডোব ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, স্কেচ ইত্যাদি) প্রায় সমস্ত ডিজাইনার তাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো যেমন, mockups ক্রিয়েটিং, লোগো ও ইমেজ ডিজাইন এবং মডিফাই করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে।
আর তাই আপনাকেও এর ব্যবহার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
HTML
একজন ওয়েব ডিজাইনারের কোডিং সম্পর্কেও জানা দরকার। কেননা, বর্তমানে বেশিরভাগ ডিজাইনের কাজের ক্ষেত্রেই কোডিং এর দক্ষতা প্রয়োজন। HTML মানে Hypertext Markup Language, যা কোনো ওয়েব পেইজে কনটেন্ট পুট করার ক্ষেত্রে এবং সেটাকে স্ট্রাকচার দেয়ার জন্য কোডিং ল্যাংগুয়েজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
CSS
CSS অথবা Cascading Style Sheet কে সাধারণভাবে HTML এর পার্টনার বলা যায়। কেননা, এটি একটি কোড যা ব্রাউজারগুলোকে কোনও ওয়েব পেইজের জন্য কীভাবে HTML ফরমেট করতে হয় তা বলে দেয়। এক কথায় এটি সমস্ত টেক্সট এবং কনটেন্টগুলোকে একটি সুন্দর লুক প্রদান করে।
এর সাহায্যে আপনি কালার অ্যাডজাস্ট, ফন্টের পরিবর্তন বা চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত করা, তথাটি আরো অনেক কিছু করতে পারেন।
জাভাস্ক্রিপ্ট
HTML এবং CSS ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ডিজাইনগুলো কোড আপ করার পাশাপাশি যদি আপনি জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে প্রোগ্রামও করতে পারেন তবে আপনার প্রতিযোগিতার বিপক্ষে বিশাল লেগ আপ থাকবে। জাভাস্ক্রিপ্ট আপনাকে আপনার সাইটে স্ট্যাটিক ইলিমেন্টগুলো নিতে এবং সেগুলোকে ইন্টারেক্টিভ করার সুবিধা দিবে।
একজন ভালো ওয়েব ডিজাইনার হতে যা প্রয়োজন
একজন ভালো ওয়েব ডিজাইনার হতে গেলে আপনাকে নিম্নোক্ত এই নয়টি বিষয় শিখে নেওয়া জরুরী-
- ভিজ্যুয়াল ডিজাইনের বেসিক নিয়মগুলো আয়ত্ত করুন।
- লে-আউট ডিজাইন শিখুন।
- কালার-প্রিন্সিপল সম্পর্কে ধারণা নিন।
- ইন্টারঅ্যাকশন-ডিজাইনের বেসিক নলেজগুলো শিখুন।
- PS এবং অন্যান্য ওয়েব UI mock-up টুলগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
- বেসিক কোডিং ল্যাংগুয়েজ (HTML, CSS) বুঝতে হবে।
- কোম্পানী প্রোডাক্ট এবং ইউজার গ্রুপের সাথে পরিচিত হতে হবে।
- ফ্রন্ট-এন্ড কোডিং ইডিট সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে কমপক্ষে একটিতে দক্ষতা তৈরী করুন।
- SEO সম্পর্কে শিখুন।
মূলত, একজন সফল ওয়েব ডিজাইনার হতে গেলে আপনার ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কিত সকল বিষয়ে দক্ষতা থাকা উচিত। সুতরাং, ওয়েব ডিজাইনে আপনার ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি আপনার নিজেরই নিতে হবে। ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্য আপনার স্কিল বাড়ান।
ওয়েব ডিজাইন: A Beginner’s Guide
Valuable article writing. keep it up. thanks for sharing.