গ্রাফিক ডিজাইন: The Ultimate Guide

আপনি যখন গ্রাফিক ডিজাইনের কথা ভাবেন, কখনো আর্টিস্টিক অ্যাডভার্টাইজমেন্টগুলোর কথা চিন্তা করে দেখেছেন কি? ওয়েবসাইটে নজরকাড়া গ্রাফিক্স? ম্যাগাজিনগুলোতে কী অত্যাশ্চর্যজনক ভাবে সাজানো থাকে !

পোস্টার, ইনফোগ্রাফিক্স, বুক কভার, প্রোডাক্ট লেবেল, লোগো, বিজনেস কার্ড, সাইনস, ওয়েবসাইট লেআউট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সফ্টওয়্যার ইন্টারফেস এর মতো চমৎকার সব উদাহরণগুলি সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্তর্ভূক্ত। এই উদাহরণগুলি গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে জানার একটি ভালো শুরু, তবে পুরোপরি নয়।

গ্রাফিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ডিটেইলস এবং জটিলতাগুলো শুধমাত্র একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে জানা সম্ভব না হলেও, এই হাই-লেভেল ওভারভিউ আপনাকে ক্রিয়েটিভ ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রটি আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। আপনি যদি একজন প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনার হতে আগ্রহী হন, তাহলে শুরুতেই আপনার এর বেসিক ক্ষেত্রগুলি জানা আবশ্যক।

গ্রাফিক ডিজাইন কী?

মূলত, গ্রাফিক ডিজাইন এমন একটি নৈপুণ্য যেখানে প্রফেশনালরা ম্যাসেজ কমিউনিকেট এর ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট ক্রিয়েট করে থাকে। এই ভিজ্যুয়াল ক্ল্যাসিফিকেশন এবং পেইজ লে-আউট টেকনিক প্রয়োগ করে ডিজাইনাররা ইউজারদের নির্দিষ্ট চাহিদা মেটাতে টাইফোগ্রাফি এবং পিকচার ব্যবহার করে থাকে। পাশাপাশি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স অপটিমাইজ করতে ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনের ইলিমেন্টগুলো ডিসপ্লে করার দিকে ফোকাস করে থাকে।

গ্রাফিক ডিজাইন হচ্ছে মূলত একটি শিল্প, পরিকল্পনা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা চর্চা, এবং ভিজ্যুয়াল ও টেক্সচুয়াল কনটেন্টের অভিজ্ঞতা। অন্যভাবে বলতে গেলে গ্রাফিক ডিজাইন সাধারণত ভিজ্যুয়াল উপায়ে নির্দিষ্ট আইডিয়া অথবা ম্যাসেজগুলো কমিউনিকেট করে থাকে। এই ভিজ্যুয়ালগুলি একটি বিজনেস লোগোর মতো সাধারণ, আবার কোনো ওয়েবসাইটের পেইজ লে-আউটের মতোই জটিল হতে পারে।

এটি গ্রাফিক্যাল ও টেক্সচুয়াল ইলিমেন্টগুলিকে গ্রহণ করে সেগুলিকে আবার বিভিন্ন ধরনের মিডিয়াতে প্রয়োগ করে। একজন প্রোডিউসারকে তার গ্রাহকের সাথে কানেক্ট হতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রজেক্ট, ইভেন্ট, প্রচার বা প্রোডাক্টস এর বার্তা বহন করে থাকে। বিভিন্ন কোম্পানীগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্টগুলো সেল এবং প্রমোট করতে, ওয়েবসাইটের দ্বারা ইনফোগ্রাফিক্সের মাধ্যমে জটিল তথ্যগুলো বহন করার ক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইন ব্যবহার করে। আবার কিছু বিজনেসগুলো ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে একটি পরিচিতি বিকাশের ক্ষেত্রেও গ্রাফিক ডিজাইন ব্যবহার করে থাকে।

তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, গ্রাফিক ডিজাইন প্রজেক্টগুলোর বিজ্ঞাপন এবং লোগোর ন্যায় কিছু বাণিজ্যিক লক্ষ্য আছে। এটি অন্যান্য প্রসঙ্গেও ব্যবহৃত হয় এবং গ্রাফিক ডিজাইনের কাজগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিল্পীসুলভ বহিঃপ্রকাশের উপায় হিসেবে তৈরী হয়। 

গ্রাফিক ডিজাইন: The Ultimate Guide

গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কিত বেসিক ধারণা

গ্রাফিক ডিজাইনের অর্থ আরও ভালভাবে বোঝার জন্য এর ডিজাইন তৈরীর ইলিমেন্ট এবং প্রিন্সিপল সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দর্শনের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালীরূপে তৈরীর জন্য ইলিমেন্টগলি একে অপরের সাথে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িত। 

এই ইলিমেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. কালার
  2. ফর্ম
  3. লাইন
  4. শেপ
  5. সাইজ
  6. স্পেস
  7. টেক্সচার ইত্যাদি

সাধারণত গ্রাফিক ডিজাইনাররাও ডিজাইনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিগুলি মেনে চলেন। এই নীতিগুলি এমন কিছু গাইডলাইনের সেট যা কোনো ডিজাইনকে একটি কার্যকরী গঠন অর্জনে সহায়তা করে।

গ্রাফিক ডিজাইনের এই প্রিন্সিপলগুলি নিম্নরূপ:

  1. ব্যালেন্স
  2. পার্থক্য
  3. অনুপাত
  4. মুভমেন্ট
  5. জোর
  6. ছন্দ

গ্রাফিক ডিজাইনের ধরণ

মূলত, গ্রাফিক ডিজাইনের একক কোনো অর্থ নেই।  গ্রাফিক ডিজাইন প্রিন্ট এবং ওয়েব ডিজাইন থেকে শুরু করে অ্যানিমেশন এবং মোশন গ্রাফিক্স পর্যন্ত অনেকগুলি ক্ষেত্র এবং বিশেষায়িত সমন্বয়ে গঠিত। গ্রাফিক ডিজাইন  আগ্রহী ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অফার করে থাকে।

আজ থেকে ত্রিশ বছর আগেও গ্রাফিক ডিজাইনের উদাহরণ হিসেবে সবাই ম্যাগাজিন, মুভি পোস্টার এবং বিজ্ঞাপনগুলির দিকে ফোকাস করতো। তবে, বর্তমানে আমরা ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি। আর তাই কিছু নতুন ধরনের গ্রাফিক ডিজাইনের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি। 

বর্তমান এই অত্যাধুনিক যূগে প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকে উদ্ভুত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রাফিক ডিজাইনের উদাহরণ হলো:

  • ওয়েবসাইট ডিজাইন: সাধারণত ইউজারদের জন্য আকর্ষণীয় এবং প্রত্যক্ষজনিত  ওয়েব পেজ তৈরী করা ওয়েবসাইট ডিজাইনের অর্ন্তভূক্ত। এছাড়াও অভারওল লে-আউট, কালার-ডিজাইন, এবং নেভিগেশনও এর অর্ন্তভূক্ত।
  • ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ডিজাইন: এটি একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহজ এবং উপযুক্ত কি না তা নিশ্চিত করার দিকে ফোকাস করে থাকে। এই ধরনের ডিজাইনাররা সাধারণত মান, ব্যবহারযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং কমনীয়তার উপর অধিক জোর দিয়ে থাকে।
  • মোশন গ্রাফিক ডিজাইন: মোশন গ্রাফিক ডিজাইন বা অ্যানিমেশন সাধারণত স্পেশাল ইফেক্ট, টিভি শো, ভিডিও গেম এবং মুভির মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল ইলিমেন্টগুলিকে বাস্তব রূপ প্রদান করে।

গ্রাফিক ডিজাইন: The Ultimate Guide

গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে নতুন ধরণের গ্রাফিক ডিজাইন প্রবর্তনের সাথে সাথে এর কাজগুলিরও আবির্ভাব ঘটেছে। গ্রাফিক ডিজাইনের এই বিবর্তন পুরো যাত্রাপথকে পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে প্রিন্ট পাবলিশারদের জন্য কাজ করে এমন সব ট্রেডিশনাল গ্রাফিক ডিজাইনারদের চাহিদা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। 

তবে এই চাহিদার বেশিরভাগ অংশই বিজনেসের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন অর্গানাইজেশনগুলি তাদের ডিজিটাল প্রেজেন্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিজিটাল গ্রাফিক্স এবং চিত্রাবলীর প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়েছে। চাহিদা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কিছু সাধারণ গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের শিরোনামগুলো নিচে দেওয়া হলো। যেমন:

  • গ্রাফিক ডিজাইনার
  • ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ডিজাইনার
  • ওয়েব ডিজাইনার
  • আর্ট ডিরেক্টর
  • ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ইত্যাদি

সুতরাং, বলা যায় শুধমাত্র একবার যথাযথ নলেজ এবং ট্রেইনিংপ্রাপ্ত হওয়ার পরেই আপনি বেশ কয়েক ধরনের গ্রাফিক ডিজাইনের জবের বিকল্প পাচ্ছেন। আর তাই, আপনার আগ্রহ এবং পার্সোনাল স্কিলের মাধ্যমে আপনার ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলুন।

গ্রাফিক ডিজাইন: The Ultimate Guide

পপুলার গ্রাফিক ডিজাইন টুলস

 ইতোমধ্যে আপনি জেনে গেছেন যে গ্রাফিক ডিজাইনে কী ধরনের কাজ এবং বিশেষত্ব রয়েছে। আর তাই এই ধরনের কাজগুলিকে সম্পাদন করতে সহায়তা করতে পারে এমন সব টুলস সম্পর্কেও আপনার জেনে থাকাটা আবশ্যক। বর্তমানে সবচেয়ে বেসিক এবং কম ব্যয়বহুল বিশিষ্ট একটি টুল হচ্ছে – স্কেচবুক, যার ব্যবহার প্রায় অধিকাংশ গ্রাফিক ডিজাইনাররাই করে থাকেন। 

কম্পিউটার এবং ডিজাইন সফটওয়্যার আজকের ডিজিটাল পরিবেশের একটি অপরিহার্য অংশ। যদিও আপনি তা প্রিন্টের ডিজাইন করে থাকেন। আপনার কোন ধরনের কম্পিউটার প্রয়োজন তা কেবল আপনার পছন্দের ওপর ভিত্তি করবে। কিন্তু, যখন সফ্টওয়্যার এর কথা আসে তখন ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর এবং ইনডিজাইন এর মতো অ্যাডোব প্রোডাক্টগুলোই গ্রাফিক ডিজাইন ওয়ার্ল্ডের মূল ভিত্তি। 

যদি আপনি কেবলমাত্র শুরু করে থাকেন এবং ব্যয়বহুল প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করতে না চান, তবে GIMP এর ন্যায় ফ্রি ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার আপনাকে বেসিক থেকে শুরু করতে সাহায্য করতে পারে। সর্বোপরি, একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল ধারণা এবং অনুপ্রেরণা। 

গ্রাফিক ডিজাইনাররা তাদের চারপাশের বিশ্ব থেকে অনুপ্রেরণা অর্জন করে। সেখানে আপনি যদি এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে আপনি যথেষ্ট ক্রিয়েটিভ নন। বাইরের পরিবেশ দেখুন, আপনার সহকর্মীদের থেকে ধারণা নিন অথবা ইন্টারনেট থেকে আইডিয়া খুঁজুন। এমন প্রচুর অনুপ্রেরণামূলক গ্রাফিক ডিজাইন ব্লগ রয়েছে যা আপনার ক্রিয়েটিভিটি তৈরী করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। 

গ্রাফিক ডিজাইনে আপনার ভবিষ্যত তৈরি করুন

মূলত, গ্রাফিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে একক কোনো সংজ্ঞা নেই। বিভিন্ন ধরনের বিজনেস প্রব্লেম সমাধান করার অনুপ্রেরণা জাগাতে  গ্রাফিক ডিজাইন ব্যবহারের অসংখ্য উপায় রয়েছে। আপনার এবং আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইনের অর্থ ঠিক কি তা নির্ধারন করা কেবলমাত্র আপনার ওপরই নির্ভর করে। 

সুতরাং, সঠিক সিদ্ধান্তের সাথে শুরু করুন এবং গ্রাফিক ডিজাইনে আপনার ভবিষ্যত গড়ুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *